• মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ন
Headline
সাতক্ষীরা-৩: বিএনপি প্রার্থী কাজী আলাউদ্দিনের পাশে ইঞ্জিনিয়ার মুকুল, দেখা করতে অস্বীকৃতি ডা. শহিদুলের সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট বাহিনীর জেলেদের আটককৃত কাঁকড়া বিক্রির অভিযোগ সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে শীতে আক্রান্ত হয়ে জেলের মৃত্যু শ্যামনগরে এক হরিণ শিকারীকে আটক যশোরে পদোন্নতি বঞ্চিত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের কর্মবিরতি শার্শায় মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবাসহ মাদক মামলার আসামি গ্রেফতার আমেরিকা থেকে এই প্রথম আনা ৬০৮৭৫ টন গম মোংলা বন্দরের বহিরনোঙ্গরে খালাস “মৎস্য খাতে নতুন উদ্যম—মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ কর্মকর্তাদের ব্যতিক্রমী গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন” একই দিনে খুলনায় চারজনকে হত্যা শহর জুড়ে আতঙ্ক খুলনা-বরিশাল অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট , বাস মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি

হাজারও দুঃখ কষ্টের মধ্যে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত,দারিদ্র্যতায়ও হাত ছাড়েননি বাগেরহাটের দেলোয়ার-রহিমা

বাগেরহাট প্রতিনিধি / ৫৮ Time View
Update : বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

অভাবের তাড়নায় স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মহত্যা কিংবা অভাবের কারণে সংসার ভাঙার খবর যখন শিরোনাম হচ্ছে প্রায়ই, তখন এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখা মিলেছে উপক‚লীয় জেলা বাগেরহাটে। বাগেরহাট পৌরসভার লঞ্চঘাট এলাকায় পলিথিন দিয়ে মোড়ানো একটি ঝুপড়ি ঘরে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন ৭০ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন শেখ ও তার স্ত্রী ৫৮ বছর বয়সী রহিমা বেগম। বসবাসের অনুপযোগী এই ঝুপড়িঘরই তাদের একমাত্র আশ্রয়।
জীবনের দীর্ঘ ৪৫ বছরের দাম্পত্য যাত্রায় সুখ-দুঃখের নানা অভিজ্ঞতা থাকলেও কঠিন বাস্তবতায় তারা কখনো একে অপরের হাত ছাড়েননি। এ যেন দারিদ্রের আঁধারেও ভালোবাসা ও আস্থার আলোয় পথ চলা। জীবনের শেষ প্রহরেও একে অপরের হাত ধরে বেঁচে থাকার গল্প, যা মনে করিয়ে দেয়, সংসারের আসল শক্তি অর্থ নয়, বরং পারস্পরিক ভালোবাসা, ত্যাগ ও বিশ্বাস।
দেলোয়ার শেখ ছিলেন লঞ্চঘাট এলাকার দিনমজুর। শ্রমে-ঘামে সংসার চালালেও বয়সের ভারে এখন আর কাজের শক্তি নেই তার। পুরোনো দিনের কিছুটা স্বচ্ছল জীবনের স্মৃতি মনে পড়লে স্ত্রী রহিমার হাত ধরে নদীর পাড়ে বসে থাকেন তিনি। আক্ষেপ করে বলেন, শেষ বয়সে অন্তত একটি ভালো ঘরে আশ্রয় নেওয়ার ইচ্ছা রয়ে গেছে। জীবনের অবশিষ্ট সময়টা যেন শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারেন।
দেলোয়ার শেখ বলেন, আগে শরীরে শক্তি ছিল, কাজ করে স্বচ্ছলতার সঙ্গে জীবন কাটিয়েছি। এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারি না। শরীর ভালো থাকলে মাঝে মাঝে ভ্যান চালাই। এছাড়া আমার স্ত্রী রহিমা কাগজ সংগ্রহ করে, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে।
দেলোয়ারের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। তারাও দরিদ্র, কোনোমতে সংসার চালায়, তাই আমাদের দেখাশোনা করতে পারে না। দারিদ্রতার কারণে কখনও স্বামীকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখনও চিন্তাও করিনি তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা। দুঃখ-কষ্ট নিয়েই তো সংসার। স্বামী অভাবে পড়লে কেন তাকে ছেড়ে যেতে হবে? তার সুখের দিনেও তো আমিই সঙ্গে ছিলাম। এখন দেখি অনেকেই অভাবে পড়লে স্বামীকে ছেড়ে যায়, অনেকে তো সন্তান ফেলে রেখেও চলে যায়। এছাড়া অভাবে পড়ে স্ত্রী-সন্তান রেখে স্বামীকে চলে যেতে দেখেছি। আমি বুঝি না এরা কেন চলে যায়। পরস্পর বিশ্বাস আর ভালোবাসা থাকলে কখনও ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না।
বাগেরহাটের লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা হৃদয় শেখ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাচা-চাচিকে এই পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরেই থাকতে দেখছি। বর্তমান সমাজে যেখানে অভাবের কারণে সংসার ভেঙে যায়, স্ত্রী, স্বামী-সন্তান ফেলে চলে যায়, সেখানে তারা আমাদের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। তাদের জীবন থেকে নতুন প্রজন্মের দম্পতিরা অনেক কিছু শিখতে পারে। সরকারের উচিত এ ধরনের দম্পতিদের সহায়তা করা।
একই এলাকার শেখ আল মামুন বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের দম্পতিরা মূলত অভাব ও কষ্ট স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু সংসার জীবনের মূলমন্ত্রই হলো ত্যাগ, ছাড় আর ভালোবাসা। আমাদের এ চাচা-চাচি আগের আমলের মানুষ। তারা সংসার করেছেন ত্যাগ, ছাড় আর ভালোবাসার ভিত্তিতে। আজকের প্রজন্মের মধ্যে এটা খুব কমই দেখা যায়।
একই এলাকার ভ্যানচালক কবির শেখ বলেন, অসহায় এই বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে এখানে থাকতে দেখছি। সমাজের বিত্তবানসহ সরকারেরও উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো ও সহায়তা করা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে এ ধরনের দরিদ্র ও অসহায় দম্পতিদের সহায়তা করা সম্ভব। খোঁজখবর নিয়ে দেলোয়ার-রহিমা দম্পতিকে সহায়তা করা হবে।##


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা