• বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
Headline
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মৈত্রী সুপার শপের জমকালো উদ্বোধন হাসপাতালে বেড সংকট: সিঁড়িতে শুইয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খুলনার নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিলেন আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকার সাতক্ষীরা-৩: বিএনপি প্রার্থী কাজী আলাউদ্দিনের পাশে ইঞ্জিনিয়ার মুকুল, দেখা করতে অস্বীকৃতি ডা. শহিদুলের সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট বাহিনীর জেলেদের আটককৃত কাঁকড়া বিক্রির অভিযোগ সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে শীতে আক্রান্ত হয়ে জেলের মৃত্যু শ্যামনগরে এক হরিণ শিকারীকে আটক যশোরে পদোন্নতি বঞ্চিত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের কর্মবিরতি শার্শায় মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবাসহ মাদক মামলার আসামি গ্রেফতার আমেরিকা থেকে এই প্রথম আনা ৬০৮৭৫ টন গম মোংলা বন্দরের বহিরনোঙ্গরে খালাস

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মেলে না

এমডি রুহুল যশোর প্রতিনিধি: / ১৮৩ Time View
Update : শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যশোর প্রতিনিধি:

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। ফলে সরকারি হাসপাতালে রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে রাতে চিকিৎসকের ভূমিকায় থাকেন ইন্টার্ন, ওয়ার্ডবয়, আয়া ও ঝাড়ুদার। এদিকে, শুক্রবার কোন কনসালটেন্ট বা সহকারি রেজিস্ট্রাররা হাসপাতালের দিকে উকি ও দেন না।

গত কয়েকদিনে দীর্ঘ সময় পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ডে অবস্থান করে দেখা গেছে, সড়জ দুর্ঘটনায় আহত, ছুরিকাহত, প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সব রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ইন্টার্ন। রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেও সহকারী রেজিস্ট্রার ও বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক আসেন না। ইন্টার্ন রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দেন। অন্যথায় নিয়ম বর্হিভূতভাবে রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করে দিচ্ছেন। এই ওয়ার্ড থেকে গত ১ সপ্তাহে ২২ রোগীকে খুলনা অথবা ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রেফার্ড করা হয় যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুর এলাকায় ছুরিকাহত সাকিবকে (১৯)।

অথচ সরকারি এই হাসপাতালে সার্জারী ও অর্থোপেডিক বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ডিগ্রিধারী চিকিৎসক রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ সেবিকা জানান, নিয়ম অনুযায়ী রোগী ভর্তির পর এক জন ইন্টার্ন আসবেন। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে অনকলে সহকারী রেজিস্ট্রারকে জানাবেন। সহকারী রেজিস্ট্রার রোগী দেখে অবস্থা খারপ মনে করলে রোস্ট্রার অনুযায়ী দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকবেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কোন কাজ করা হয়না। তাদের অনুপস্থিতিতে সব জান্তা ইন্টার্ন চিকিৎসক ।

 

 

রোগীদের ভরসার স্থল হল যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। যে কারণে যশোর ছাড়াও নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা এই হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য আসেন। উন্নত চিকিৎসার আশায় ভর্তির পর তারা চিকিৎসা দুর্ভোগের শিকার হন। বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে কিন্তু রোগীদের ভাগ্যে ঠিকমতো তাদের চিকিৎসাসেবা জোটেনা। প্রতিদিন সকালে তারা মাত্র একবার করে ওয়ার্ড রাউন্ডে যান। তাও তড়িঘড়ি করে রাউন্ড শেষ করেন। যে কারণে অনেক রোগী তাদের রোগ নিয়ে ঠিক মতো কথা বলতে পারেন না। তাদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য আরও বেড়ে যায়। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ক্লিনিক বানিজ্য জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন।

রফিকুল ইসলাম নামে রোগীর এক স্বজন জানান, সকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দল বেধে রাউন্ডে আসে। কিন্তু বেশি সময় রোগীর সাথে কথা বলেন না। ব্যস্ততার সাথে বের হয়ে যান। সারাদিনে বিশেষজ্ঞদের আর দেখা মেলেনা। এছাড়াও তারা কোন রাতে ওয়ার্ড রাউন্ডে আসেননা। তিনি আরও জানান, পূরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে তার রোগী এক সপ্তাহের বেশি চিকিৎসাধীন। এত দিনে একরাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ফলোআপ চিকিৎসার জন্য রাউন্ডে যাননি। রফিকুলের মত একই কথা জানান রোগীর স্বজন

রাসেল, বৃষ্টি, পারভীনা ও আশাদুল ইসলামসহ অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এখানেই রয়েছে অনিয়মের বিশাল এক বাণিজ্য। বিশেষজ্ঞরা ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে পকেট ভরতে ব্যস্ত থাকেন। আর সব কিছু ছেড়ে দেয়া হয় ইন্টার্নদের ওপর। ইন্টার্নদের অনকল না হয়ে সেটা অন মোবাইলে কনভার্ট হয়েছে। অনেক সময় ইন্টার্নরা মোবাইলে পরিস্থিতি জানানোর পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোবাইলেই রোগীর জন্য চিকিৎসার সাজেশন দেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ফাইলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতের লেখায় এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। এজন্য ইন্টার্নরা ‘দিনভিত্তিক সম্মানি’ও পেয়ে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের কাটা ছেড়া রোগী দেখলেই এগিয়ে আসেন ওয়ার্ডবয়, আয়া নতুবা ঝাড়ুদার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সহকারী রেজিস্ট্রারদের অনুপস্থিতিতে তারা রোগীর স্বজনদের হাতে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার শর্ট স্লিপ ধরিয়ে দেন। এরপর ইনজেকশন সিরিঞ্জ, স্যালাইন, সুই সুতো নিয়ে তারাই করেন চিকিৎসা। আবার ক্যানোলা, ইউরিন ব্যাগ, খাদ্য গ্রহণের পাইপ লাগানো কাজও তারা করেন। এতে তারা লাভবান হন। কেননা প্রতি রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে হাসপাতালের কর্মীরা অর্থবাণিজ্য করেন। সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী ওয়ার্ডে অধিকাংশ সময় চিকিৎসকের ভূমিকায় ওয়ার্ডবয় ও ঝাড়ুদারকে দেখা যায়।

একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা ছাড়া সারদিনে কোন চিকিৎসক রোগীর কাছে যাননা। সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। জরুরি মুহুর্তে রোগীর চিকিৎসাসেবায় ডাক্তার পাওয়া যায়না। কিছু কিছু সময় সিনিয়র সেবিকারাও রোগীর কাছে যান না। একবারের বেশি ডাকলে তারা খুব রুঢ় আচরণ করেন। তারাও শিক্ষনবীশ সেবিকাদের দিয়ে কাজ সারেন। সরকারি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক-সেবিকা যেনো ফাঁকিবাজিতে ব্যস্ত।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরেও কেউ রাতে ওয়ার্ড রাউন্ডে আসেন না বলে জানতে পেরেছেন। তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা