• শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
Headline
শরণখোলায় হরিণের মাংসসহ আটক ২ খুলনা’র বটিয়াঘাটায় সরকারি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদে সরেজমিনে পরিদর্শন দৈনিক খুলনাঞ্চল সম্পাদককে হুমকি: থানায় জিডি খুলনার সাব্বির হত্যা মামলার আসামীকে আটক করেছে র‍্যাব রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি সাতক্ষীরায় মাদক মামলার যাবতজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব -৬ প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার খুলনা ওয়াসা: পদোন্নতি বদলি দরপত্র বাণিজ্যই তার কাজ সাতক্ষীরায় ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, পানিবন্দী বহু পরিবার ছাত্ররাজনীতিকে ‘না’ বললো খু‌বির সহস্রাধিক নবীন শিক্ষার্থী

চারদিকে বিশাল জলরাশি, কোথাও নেই সুপেয় পানি

খুলনাভিশন ডেক্স / ৩১ Time View
Update : শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

সুন্দরবন বেষ্টিত খুলনার কয়রায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। চারদিকে সুবিশাল জলরাশি থাকলেও কোথাও নেই পানযোগ্য পানি। অনেক স্থানে গভীর নলকূপ থাকলেও পানিতে আয়রন ও লবণযুক্ত। পুকুরের দূষিত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।

উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৩ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। কিন্তু ৬০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। ৫নং কয়রা, ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রা, গড়িয়াবাড়ি, পাথরখালী, মঠবাড়ি, তেঁতুলতলার চর, কালীবাড়ি সাতহালিয়া, চৌকুনী, গাতিরঘেরিসহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় খাবার পানির সংকট রয়েছে।

সরেজমিনে শুক্রবার (২১ মার্চ) উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের সরকারি পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, খাবার পানি সংগ্রহের জন্য কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজন পড়ন্ত বিকেলে দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন। অনেকেই কাঁখে কলসি নিয়ে দলবদ্ধভাবে আসছেন পানি নিতে। কেউ বা ব্যস্ত কলসিতে পানি ভরতে। আবার অনেকেই কলসিতে পানি ভরে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ির পথ ধরে।

৬ নম্বর কয়রা গ্রাম থেকে ৪ কিলোমিটার হেঁটে ফাঁকা মাঠ পাড়ি দিয়ে পুকুরের পানি নিতে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ খাদিজা খাতুন। বয়সের কারণে অনেকটা পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে কলসি রেখে বিশ্রামে বসে পড়েছেন ঘাটে। বিশ্রামের সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দুই কলস করে পানি নিয়ে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো হাঁটতে পারি না। দুইবার পানি আনতে দিনের আধাবেলা লেগে যায়। আমাদের আশপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এই পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়।’ স্থানীয় বাসিন্দা রওশানারা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে টিউবওয়েলে ভালো পানি পাওয়া যায় না। বর্ষা মৌসুমের পর ২০ লিটার পানি ৩০ টাকা দিয়ে কয়রা সদর থেকে কিনে খেতে হয়। শুনতিছি সরকার পানির ট্যাঙ্কি দেয়, কিন্তু আমরা পাই না। আমাদের তো আর টাকা দিয়ে পানি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নাই। তাই বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি খাই।’

পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে পানি নিতে আসা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘আমরা বর্ষাকালে একটু ভালো থাকি। তারপর বাকি সময় ধরে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। কিন্তু আমাদের এক পুকুর থেকে মানুষ, গরু-ছাগল একলগে পানি খাচ্ছি। মাঝে মাঝে পানিদূষণের কারণে অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পুকুরের চার পাশে ঘেরা বেড়া থাকলে গরু-ছাগল পুকুরে নেমে পানি দূষিত করতে পারত না।’

৬ নম্বর কয়রা গ্রামে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠী মুন্ডা সম্প্রদায়ের বাসন্তী মুন্ডা বলেন, ‘আমাদের কয়েক কিলোমিটার দূর হতে পুকুরের পানি এনে খেতে হয়। দিনের অর্ধেক সময় পার করতে হয় রান্না ও খাওয়ার পানি আনতে। এ রকম সমস্যা অধিকাংশ জায়গায়।’

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত স্থানীয়দের দান করা ৩ বিঘা জমির ওপর সরকারি পুকুরটি খনন করা হয় ৮০-এর দশকে। সেই থেকে পুকুরটি কয়েকবার নামমাত্র খনন করা হলেও এ রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন দেখা গেছে, পুকুরের দুই পাড়ে দুটি পিএসএফ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। নেই কোনো ঘাটের ব্যবস্থা। প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ বিভিন্ন গ্রাম থেকে হেঁটে, কেউ ভ্যানে করে পুকুর থেকে কাদামিশ্রিত, লবণযুক্ত পানি নিয়ে যাচ্ছে। পুকুরটির চারপাশে ঘেরা বেড়ার ব্যবস্থা না থাকায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি অবাধে পুকুরে নেমে দূষিত করছে পানি।

চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষ ও পশুপাখি একই পুকুরের পানি ব্যবহারের ফলে রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দূষিত পানি পান করার ফলে আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিসসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক মানুষ। বিশেষ করে ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

কয়রা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইস্তিয়াক আহমেদ বলেন, কয়রা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানে অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। লবণাক্ততার করণে অধিকাংশ এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট থাকে। তবে সরকারিভাবে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, ৫ নম্বর কয়রা সরকারি পুকুরের বিষয়টা জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে জেনেছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে দ্রুত পুকুরের পিএসএফ সংস্কার করে চারপাশে ঘেরার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে পুকুরে কোনো পশুপাখি প্রবেশ করতে না পারে।


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা