খুলনা সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জ থেকে গোলপাতা কাটার নামে চলছে হরিলুট ,সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। সহকারি রেঞ্জ কর্মকর্তা ,কুপ অফিসার এবং স্টেশন কর্মকর্তা একই ব্যক্তি হওয়ায় ঘুষ বাণিজ্য বেড়েছে । আর এই সকল ঘুষের টাকা একই ব্যক্তি সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা কুপ অফিসার ও স্টেশন কর্মকর্তার হাত থেকে বন্টন হচ্ছে।
প্রতি নৌকায় পাঁচ শত মন গোলপাতা আনার কথা থাকলেও , নৌকা প্রতি প্রায় ২ হাজার থেকে ২৫ শ মন, গোলপাতা আনা হচ্ছে। কুপ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন কে নৌকা প্রতি ১৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিলেই মিলছে অবৈধ গোলপাতা ও সুন্দরবনের কাঠ কাটার বৈধতা। যদিও কুপ থেকে একটি টাকা নেওয়ারও কোন নেওয়ার কোন বৈধতা নেই। এছাড়া প্রত্যেকটা ফরেস্ট স্টেশনে দিতে হয় টাকা। বাওয়ালিদের গোলপাতা কাটতে গেলে নৌকা প্রতি ৫০ হাজার টাকা দিতে হয় শুধু ফরেস্টের বিভিন্ন স্টেশন ও ক্যাম্প কে। সরকার রাজস্ব না পেলেও প্রতিগোনে কুপ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের পকেটে যাচ্ছে ৮৯ টি নৌকা থেকে প্রায় ১৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা । অন্যান্য ক্যাম্পে দিতে হয় প্রায় ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।এছাড়া শুধুমাত্র খুলনা রেঞ্জ থেকে অবৈধভাবে প্রতিগনে প্রায় ৫৬ হাজার ৫১৫ টি গাছ কাটা হচ্ছে।
গোলপাতার নৌকা গুলো সুন্দরবন এ যাবার আগে ও পরে কুপ কর্মকর্তা ও স্টেশন কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে নৌকা ছাড়ার কথা থাকলেও কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ঘুষের বিনিময়ে সকল নৌকায় আনা হচ্ছে অবৈধ কাঠ এবং অতিরিক্ত গোলপাতা আর এজন্য কুপ কর্মকর্তাসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
আবেদ আলি নামে এক বাওয়ালি বলেন, আমরা প্রতিগণে পাস পারমিট নিয়েই সুন্দরবনে যেয়ে থাকি। সরকারি রেভিনিউ যেখানে মন প্রতি ৩০০ টাকা সেখানে আমাদের ফরেস্ট অফিসকে ঘুষ দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা নৌকা প্রতি। এত টাকা ঘুষ দিয়ে সুন্দরবনে গোলপাতা কাটতে গেলে আমাদেরও তো লাভ করতে হবে এজন্য আমরা ৫০০ মনের জায়গায় নৌকায় যত ধরে ততই কাটি। এতে করে কখনো ২০০০ মন থাকে। ঘুষ ছাড়া ফরেস্ট অফিসে কোন কথা বলা যায় না। প্রত্যেকটা ক্যাম্প বা স্টেশনের সামনে দিয়ে যেতে গেলেই তাদেরকে ডিউটির টাকা দিতে হয়। এর থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
আব্দুল জব্বার নামের এক বাওয়ালি নৌকার মালিক(ছদ্মনাম) বলেন, প্রত্যেক গোনে নলিয়ান স্টেশনের কুপ অফিসার ইসমাইলকে ১৭ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া মাজা ফুটা, আদা চাই সহ সামনে যত স্টেশন রয়েছে সকল স্টেশনেই টাকা দিতে হয় আমাদের। আমরা ঘুষ দিয়ে সুন্দরবন এ যাই আবার যখন গোলপাতা নিয়ে যখন ফিরি তখন কোস্টগার্ড ধরলে কৌশলে ফরেস্ট অফিসে আমাদেরকে আবার জরিমানা করে। আমরা ঘুষের টাকাও দেব জরিমানাও দেব, আয় করবো আমরা, খাবে ফরেস্টাররা। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত নলিয়ান স্টেশনের কুপ অফিসার ইসমাইল হোসেন কোন প্রকার কথা বলতে না চাইলেও, তিনি তার বিরুদ্ধে লিখতে বলেন এসব লিখে কিছুই হবে না বলে জানান।
বিষয়টি সত্যতার কথা স্বীকার করে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ আন্দোলনকারী বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে ফরেস্ট অফিসের এ সকল দুর্নীতিবাজ অফিসারদের সরাতে হবে। একজন বাওয়ালি যখন সুন্দরবনে গোল পাতা কাটতে যায় তখন তার ৫০০০০ থেকে কম বেশি টাকা দিতে হয় এটা সত্য যার টিআইবির একটি রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে। একজন বাঙালি যখন টাকা ঘুষ দিয়ে সুন্দরবনে যাবে তখন অবশ্যই সে নিয়মের বাইরে গিয়ে নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত গোলপাতা কাটবে, সামনে যা পাবে সে তাই নিয়েই ফিরবে। আর এতে করেই সুন্দরবন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব সুতরাং আমরা চাই সঠিক নিয়মে রেভিনিউ দিয়ে সুন্দরবনে গোলপাতা কাটতে যেতে পারবে বাওয়ালিরা।
তবে এ সকল অভিযোগের সত্যতা মিললো কোস্টগার্ড এর অভিযানে ,কোস্টগার্ড গত ১২ ইং মার্চ একটি গোল পাতার নৌকা ও তার সাথে থাকা দুইটি ট্রলারে তল্লাশি করে সুন্দরবন হতে চোরাইকৃত ৫৬০ গেওয়া গাছ ও ৭৫ বড় গড়ান জব্দ করা হয়। এবং সাথে ১০ জন ভাওয়ালীকে আটক করে কোস্টগার্ড। এবং আটককৃত মালামাল ও আসামীদের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নিকট লিখিতভাবে হস্তান্তর করেন কোস্ট গার্ড।তবে এ সকল বাওয়ালিদের ইসমাইল সাহেব কৌশলে পিছনের তারিখ দিয়ে পাস পারমিটে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দেখিয়ে দেন । এ সকল অপরাধীদের কে বিভাগীয় বন দপ্তর থেকে পুনরায় সি ও আর এর মাধ্যমে জরিমানা সাপেক্ষে মুক্ত করে দেন।
এ বিষয়ে নৌকায় থাকা কৃত এক বাওয়ালি বলেন, সুন্দরবন থেকে গোলপাতা বুঝাইকারি যত নৌকা আসে প্রত্যেক নৌকাই অতিরিক্ত গাছ ও অতিরিক্ত গোল পাতা থাকে। আমাদের কোস্টগার্ড ধরেছে তবে কোনো সমস্যা নেই ফরেস্ট অফিসে গেলে ওরা আমাদেরকে কিছু জরিমানা করে ছেড়ে দিবে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় বন (পশ্চিম)কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন। গোলপাতা সহ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে যে কর্মকর্তাই ঘুষ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে করে আমি এই চেয়ারে থাকি বা না থাকি। আপনি জানেন সম্প্রতি নলিয়ান স্টেশন অফিসার কে ইতিমধ্যেই তার দুর্নীতির কারণে আমরা সরিয়ে দিয়েছি সুতরাং সুন্দরবন রক্ষার্থে কোন দুর্নীতিবাজ অফিসারকে ছার দেওয়া হবে না।